একমালিকি কারবারের বর্ণনা

ইতিহাসের দিক থেকে একমালিকি কারবারই হল কারবারী প্রতিষ্ঠানের প্রাচীনতম রূপ। সভ্যতার আদিম যুগে মিশর, রম, ভারত ইত্যাদি পৃথিবীর বিভিন্ন সব্য দেশে সংগঠিত কারবার হিসাবে একমালিকি কারবারের জন্ম হয়। এই ধরনের কারবারের মালিকের সংখ্যা কখনও একের বেশি হতে পারে না।

এই কারবারের প্রয়োজনীয় মূলধন মালিক নিজেই সরবরাহ করে এবং মুনাফা একা নিজেই গ্রহণ করে। কারবারের যাবতীয় ঝুঁকি সে একাই বহন করে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে একমালিকি কারবারের সংখ্যা প্রচুর। কারণ গঠন, নিয়ন্ত্রণ, পরিচালনা ইত্যাদি দিক থেকে এই ধরনের কারবার অত্যন্ত উপযোগী।

গার্স্তেনবার্গ এর মতে “একমালিকি কারবারে কারবারী যেমন সব কিছুরই মালিক, তেমন সব ঝুঁকি তারই” যে কারবারী সংস্থা একজন ব্যক্তির মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়, তাকে একমালিকি কারবার বলে। একমালিকি কারবারের উধ্যক্তা ও পরিচালক একই ব্যক্তি। অর্থাৎ এরূপ কারবারের মালিকের সংখ্যা কখনো একের বেশি হতে পারে না। তিনি প্রয়োজনীয় মূলধন সরবরাহ করেন, মুনাফা হলে তা ভোগ করেন এবং ক্ষতি হলে তাও একাই বহন করেন।

একমালিকি কারবারের বৈশিষ্ট্য

১. মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ: একমালিকি কারবারের মালিক মাত্র একজন। অর্থাৎ একক ব্যক্তির মালিকানায় এই কারবার প্রতিষ্ঠিত হয়। এরূপ কারবার গঠন করেন, প্রয়োজনীয় মূলধন সরবরাহ করেন এবং কারবার পরিচলনা করেন। অর্থাৎ উত্পাদন, ক্রয়বিক্রয় সবকিছুই তিনি নিজে প্রৈচ্লানা ও নিয়ন্ত্রণ করেন ।

২. আইনগত মর্যাদা: এই ধরনের কারবারের কোনো আইনগত পৃথক সত্তা নেই। অর্থাৎ কারবারের সত্তা থেকে মালিকের সত্তাকের আলাদা দেখা হয় না। আইনের দৃষ্টিতে কারবারের মালিক এবং কারবার এক ও অভিন্ন, সেজন্য মামলা-মোকাদ্দমা ক্ষেত্রে কারবারের নাম কিছু করা যায় না, মালিকের নামেই করতে হয়।

৩. মূলধন: একমালিকি কারবারের মূলধন মালিক নিজেই সরবরাহ করেন। প্রয়োজন হলে ব্যাঙ্ক, অর্থ সরবরাহকারী সংস্থা, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ঋণগ্রহণ করে ব্যবসাতে মূলধন বিনিযোগ করেন।

৪. ব্যবস্থাপনা: কারবারের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা দায়দায়িত্ব মালিককেই বহন করতে হয়। কারবার সংক্রান্ত যাবতীয় নীতিনির্ধারণ তিনি একাই করেন এবং সেই নীতি কাজে প্রয়োগ করেন। অবশ্য কারবার বড় হলে মালিক প্রয়োজনবোধে পরিচালনা দায়িত্ব কর্মচারীদের উপর ছেড়ে দিতে পারেন।

৫. স্থায়িত্ব: একমালিকি কারবারের স্থায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে মালিকের কর্মদক্ষতা ও ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। মালিকের মৃত্যু হলে কিংবা স্বাভাবিক কাজে অক্ষম হলে কারবার উঠে যায়। মালিক ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় কারবার গুটিয়ে ফেলতে পারেন।

৬. ঝুঁকি ও দায়: একমালিকি কারবারে মালিকের ঝুঁকি এবং দায় খুবই বেশি। যেহেতু তিনি কারবারের সবকিছু ভোগ করেন, সেহতু সমস্ত অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি তাঁকেই ভোগ করতে হয়। কারবারের কোনো দায় মেটাতে হলে প্রয়োজনবোধে কারবারের মালিকের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিক্রয় করে মেটাতে হবে এটাই আইন।

৭. মুনাফা অংশগ্রহণ: একমালিকি কারবারের মুনাফা মালিক একাই ভোগ করেন। লোকসান হলেও তিনিই বহন করেন। যেহেতু এই জাতীয় কারবারের মালিক একজন। অন্য কোনো অংশীদার বা ভাগীদার নেই।

৯. গোপনীয়তা রক্ষা: এই কারবারে মালিকের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় বলে কারবারের যাবতীয় গোপনীয়তা রক্ষা করা সম্ভব।

একমালিকি কারবারের সুবিধা

১.হিসাব সংক্রান্ত ব্যয়ের স্বল্পতা: এই কারবারে হিসাবরক্ষণ কিংবা নিরীক্ষা করা বিষয়ে কোনো আইনগতকড়াকড়ি নেই। ফলে অল্প খরচে হিসাবের কাজ সম্পন্ন্ন করা যায়।

২. ক্রেতাসাধারণের সঙ্গে সম্পর্ক: একমালিকি কারবারের ক্ষেত্রে কারবারের মালিকের সঙ্গে ক্রেতাসাধারণের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ হওয়ায় ক্রেতাসাধরনের অভাব, অভিযোগ, চাহিদা ইত্যাদি সম্পর্কে মালিক বুঝতে পারে বাং তাদের সঙ্গে সম্পর্কে উন্নতি ঘটে।

৩. নমনীয়তা: এই জাতীয় কারবারের মালিক সবরকম সিদ্ধান্ত নিজে গ্রহণ করায় যখন খুশি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা। ফলে এই কারবারে নীতি ও সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের নমনীয়তা অনেক বেশি।

৪. গঠনের সুবিধা: একমালিকি কারবার গঠন করা খুব সহজ ও সরল। মালিকের ইচ্ছা ও সামর্থ্য থাকলেই আইনগত আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসরণ না করেও অল্প খরচে এই কারবার শুরু করা যায়।

৫. ব্যক্তিগত অনুপ্রেরনা: এইরূপ কারবারে মালিক উদ্ধ্যক্তা নিজেই। ফলে কারবারের মুনাফা মালি নিজেই ভোগ করেন এবং ফলে কারবারের উন্নতিসাধন সম্ভব হয়।

একমালিকি কারবারের অসুবিধা:

১. মালিকের দায়দায়িত্বহীনতা: একমালিকি কারবারে যেহেতু মালিকই সর্বেসর্বা, সেহেতু মালিকের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, অযোগ্যতা ও খামখেয়ালীপনার জন্য যেকোনো সময়ে কারবারের বিপদ আসতে পারে।

২. সম্প্রসারণের অভাব: এই জাতীয় কারবারের সম্প্রসারণ সাধারনত দেখা যায় না। কারণ, একজন মালিকের পক্ষে মূলধন, কর্মদক্ষতা, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতা ইত্যাদি গুনাগুন একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।

৩. বিপর্যয়: একই মালিকের একাধিক কারবার থাকলে কোনো একটি সঙ্গতের সম্মুখীন হলে অনেক সময় তার প্রতিক্রিয়া অন্যগুলির ওপর পড়ে। এর ফলে যেকোনো একটি বা সবকয়টিরই বিপর্যয় বা ধ্বংস হতে পারে।

৪. ঝুঁকি: এইধরনের কারবারে প্রধান অসুবিধা হল অতিরিক্ত ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা। কারবারের দায়দায়িত্ব সীমাহীন। সমস্ত যুন্কি ও অনিশ্চয়তা সবই মালিককে বহন করতে হয়।

আরো পড়ুন,

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কাকে বলে এবং তাঁর বৈশিষ্ট্য

বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার কাজ

Leave a comment