পণপ্রথা বাংলা রচনা

কন্যার বিবাহে কন্যাপক্ষ পাত্রপক্ষকে যে পণ দিতে স্বীকার করেন, তাই পণপ্রথা নাম প্রচলিত। আমাদের সামাজিক আচরণকে যে সমস্ত কদাচর আছে, তার মধ্যে পণপ্রথা নিন্দনীয় ভাবে কু-প্রথা। আজকাল খবরের কাগজ খুললেই চোখে পড়ে বধুহত্যার নিষ্ঠুর ও ঘৃণ্য কাহিনী।

কাউকে বিষ দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, কাউকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। নারী আজ টাকার থলিতে পরিণত হয়েছে। ভাগ্য ভীরু ভারতীয় নারীর জীবন যুগ যুগ ধরে খুঁজেছে প্রেম-প্রীতিময় একটি সুখী গৃহকোণ। কিন্তু তা তারা পায়নি। হৃদয়হীন, স্বার্থপর পুরুষ শাসিত সমাজে পুরুষের কর্তৃত্বের প্রতীক চিহ্ন হিসাবে পণপ্রথা আজও প্রচলিত।

পনপ্রথার উৎস

বৈদিক যুগে নারী মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত থাকলেও সেই সময় থেকেই বরকে প্রলুব্ধ করার মানসিকতা গড়ে উঠেছিল। তখন পাত্রপক্ষ কোনো যৌতুক বা অর্থ দাবি করতেন না। কন্যাপক্ষ সাধ্যমত যৌতুক দিয়ে গভীর তৃপ্তি অনুভব করতেন। জবরদস্তি নিপীড়নের দ্বারা পণ বা যৌতুক আদায় করা মধ্যযুগের মুসলমান শাসনের অব্যবস্থা ও অরাজকতার যুগ থেকে শুরু হয়। পুরুষ শাসিত সমাজে নারী পরিণত হল ক্রীতদাসীতে।

পুরুষের চোখে নারী তখন পণ্য পরিনত হল। তারপর যুগে যুগে প্রচলিত প্রথম সংসারজীবন আরম্ভ করতে যাচ্ছে। তার অর্থে থেকে আরম্ভ করে নানা বিষয় প্রয়োজন। কন্যাপক্ষ অবশ্যই সেই প্রয়োজন মিটিয়ে কন্যাকে তথা পাত্রকেই সহায়তা করেন।

পণপ্রথার কুফল

স্বেচ্ছায় উপহার দেওয়ার মধ্যে থাকে ভালোবাসা। আর প্রাপ্য মনে করে কোনো কিছু দাবি করার মধ্যে নির্যাতনের মনোভাব। সামাজিক বিবাহ অনুষ্ঠান হল দুটি জীবনের দুটি মনের আজীবন মিলনের অনুষ্ঠান। এখানে শুধুই হৃদয় দেওয়া নেওয়ার সম্পর্ক স্থাপন করা হয়।

এই সুন্দর সম্পর্কের পরিবর্তে বিবাহ আজকাল পণ্য দেওয়ার সম্পর্কে পরিণত হয়েছে। এর কুফলও ভোগ করতে হচ্ছে উভয়কে, সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটেছে।নির্যাতন ও হত্যা করার মত অপরাধ ঘটছে। সমাজে একটা বিষাক্ত আবহাওয়ার সৃষ্টি হচ্ছে।

আধুনিক পণপ্রথা

পণপ্রথা একটা সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধি দূর করার জন্য আইন প্রণয়ন করা হলেও কার্যত তার প্রয়োগ ঘটেনি। পাত্রপক্ষ আজও অর্থের বিরাট অঙ্ক নিয়ে কন্যার পিতার দুরু দুরু বক্ষের স্পন্দন বাড়িয়ে দেন। তাছাড়া পাত্রের বিবাহে টি.ভি, ফ্রিজ, টেপরেকর্ডার, গাড়ি, বাড়ি গয়না ইত্যাদি জিনিস কন্যাপক্ষের অবস্থার উপর নর্ভর করে দাবি রাখেন।

অক্ষম পিতার কাছেও কখনো কখনো পাত্রপক্ষের এই নিষ্ঠুর দাবি সোচ্চার হয়ে ওঠে। আজকের পণ অর্থ ও দ্রব্য সামগ্রীর রূপ পেয়েছে। অর্থের দাবি কথাও কথাও খুব বেশি।

তাই বর্তমানে পনপ্রথার কুফল থেকে সমাজে মুক্ত হতে পারেনি। পিতাগৃহ থেকে আরও অর্থ আর দ্রব্য সামগ্রীর দাবি চলে বধুর উপর। অসহায় বধুরা তখন পিতাকে রক্ষা করার জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এইভাবে বিগত বছরে আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রদেশে কয়েক হাজার বধুর মৃত্যু ঘটেছে। দাবি অনুসারে পণ দিতে অক্ষম হওয়ার জন্য এতগুলি প্রাণ অকালে ঝরে গেছে। আজ তার অন্যথা হচ্ছে না।

পণপ্রথার বিরোধিতা

সতীদাহ প্রথার মত বর্বর এই পণপ্রথা। শুধু আইন করেই সতীদাহ প্রথা বন্ধ করা যায়নি। প্রয়োজন হয়েছিল সামাজিক আন্দোলনের। ঘৃণ্য পণপ্রথা উচ্ছেদের জন্যও আজ সেরকমভাবে প্রগতিশীল মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। পাত্রপাত্রী অভিভাবক, শুভানুধ্যায়ী প্রত্যেককেই পণপ্রথার বিরুদ্ধে সরব হতে হবে। কোথাও পণপ্রথার ঘটনা ঘটতে দেখলে সক্রিয় প্রতিরোধ করতে হবে।

উপসংহার

এই বর্বরতা আমাদের ভারতীয় সমাজের বহুকালের কলঙ্কিত ইতিহাস। সাম্প্রতিক অর্থশাসিত রাজতন্ত্রের নির্লজ্জ প্রতিক্রিয়ার তা গেছে মাত্র ছাড়িয়ে। প্রতিদিনের সংবাদপত্রে তার একটি ভগ্নাংশ মান পরিবেশিত হয়। কত ফুল ঝরে তার কাহিনী থাকে অলিখিত।

পণপ্রথা আইন বন্ধ করা হলেও তা গোপনে গোপনে এখন চলছে। তাই জনসাধারণকে পণপ্রথার কুফল সম্পর্ক অবগত করাতে হবে। পাত্র ও পাত্রীর পক্ষ থেকে দৃঢ়তার সঙ্গে পনপ্রথার বিরোধিতা করতে হবে। তবেই আমরা সমাজ দেহের এই ব্যাধির কবল থেকে মুক্ত হতে পারব।

পাটের রচনা

আমার শখ রচনা

পণপ্রথা বাংলা রচনা

Leave a comment