সরকারি আয়ের বিভিন্ন উৎস

সরকারি আয়ের বিভিন্ন উৎস – সরকার লব্ধ সমস্ত প্রকার রাজস্বই সরকারি আয়ের অন্তর্ভুক্ত। সরকারের রাজস্বকে দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। একটি কর রাজস্ব এবং অপরটি অ-কর  রাজস্ব। কর রাজস্বের মধ্যে থাকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ কর থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব।  অন্যদিকে অ-ক রাজস্বের মধ্যে পড়ে প্রশাসনিক রাজস্ব, দান ও অনুদান, সরকারি উৎপাদন ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মুনাফা, সরকারি ঋণ ইত্যাদি। 

(১) কর রাজস্ব: আধুনিক রাষ্ট্রের রাজস্বের প্রধান উৎস কর। কর দেওয়া বাধ্যতামূলক এবং করের থেকেই সংগৃহিত হয়।  কোনরূপ প্রত্যক্ষ সুবুধার প্রত্যাশা না করে সরকারকে বাধ্যতামূলকভাবে যে অর্থ প্রদান করতে হয়, তাকেই কর বলা যায়। করের এই সংজ্ঞাটি বিশ্লেষণ করলে করের দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। 

প্রথমত, কর প্রদান করা বাধ্যতামূলক। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উপর কর ধার্য করা হলে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর আদায় দিতে বাধ্য থাকেন। 

দ্বিতীয়ত, কর প্রদানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সুবুধা ভোগের কোনো সম্পর্ক জড়িত থাকে না। অর্থাৎ কর প্রদানকারী করের বিনিময়ে সরকারের কাছ থেকে সরাসরি কোনো সুযোগ সুবিধা পায় না। যদিও সরকার কর রাজস্বের জনগনের কল্যানের জন্যই ব্যয় করে তবুও কর প্রদানকারী কর প্রদানের বিনিময়ে সরাসরি কোনো সুযোগ সুবিধা দাবি করতে পারে না। 

(২) প্রশাসনিক রাজস্ব: প্রশাসনিক রাজস্ব বলতে ফি, লাইসেন্স, জরিমানা, সম্পত্তির স্বত্বলোপ ইত্যাদি প্রাপ্তিকে বোঝায়। সরকারি শাসনকার্যে ফলস্বরূপ এই ধরনের রাজস্ব আদায় হয় বলেই তাকে প্রশাসনিক রাজস্ব বলা হয়। 

(৩) বানিজ্যিক রাজস্ব: বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নানা ধরনের অর্থনৈতিক কাজকর্ম করে থাকে। এর ফলে ওই সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান যে রাজস্ব সংগ্রহ করে থাকে তাকে বলা হয় বানিজ্যিক রাজস্ব।

যেমন- সরকারের ডাক ও তার বিভাগ থেকে আয়, রেলপথ থেকে আয়, বেতার কেন্দ্র বা দুরদর্শন কেন্দ্র থেকে আয়, ইত্যাদি বানিজ্যিক রাজস্বের অন্তর্ভুক্ত। এই ধরনের রাজস্ব সরকারের সাধারণ প্রশাসনিক কাজকর্মের আয় হিসাবে সংগৃহিত হয় না। সরকার বিশেষ সেবা কার্যের উৎপাদনে বা বিশেষ দ্রব্যর উৎপাদনে নিযুক্ত থাকার ফলে এই ধরনের আয় সৃষ্টি হয়।

(৪) অনুদান ও দান : সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে অনুদান বা দান পেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ কোনো সরকার বিদেশের কোনো সরকারের কাছ থেকে বা বিদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনুদান পেতে পারে। অনুদানের বৈশিষ্ট্য এই যে, এই ধরনের অর্থ সরকার গ্রহণ করে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য এবং ওই অর্থ ওই উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই ব্যয় করতে হয়। যেমন, আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার ভারত সরকারকে অর্থ সাহায্য করল।

এটি ভারত সরকারের রাজস্বের অনুদান। অনুদান হতে প্রাপ্ত অর্থ আর ফেরত দিতে হয় না। দেশের জনসাধরণের এবং দেশের প্রতিষ্ঠানসমূহ বিশেষ কাজের জন্য সরকারকে কিছু অর্থ স্বেচ্ছায় প্রদান করতে পারে। একে দান বলে। দান সম্পুর্ন ঐচ্ছিক।

(৫) সরকারি ঋণ: সরকার ঋণপত্র বিক্রি করে জনসাধরণের কাছ থেকে অথবা ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে রন গ্রহণ করে থাকে। সরকারি ঋণপত্রের বিক্রয় লব্ধ অর্থকে সরকারি রাজস্বের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দেশের অভ্যন্তরে থেকে সরকার যেমন ঋণ গ্রহণ করতে পারে তেমনি বিদেশ থেকেও সরকার ঋণ গ্রহণ করত পারে।

বিদেশের সরকার বা বিদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া অর্থ সরকারি রাজস্বের অন্তর্ভুক্ত।

(৬) নোট ছাপানো: অনেক দেশে সরকারের হাতে নতুন নোট ছাপানোর আইনগত ক্ষমতা থাকে। এরূপ ক্ষমতা থাকলে সরকার নতুন নোট ছাপিয়ে কিছু অর্থ পেতে পারে। এটিও অ-কর রাজস্বের অন্তর্ভুক্ত একটি সরকারি আয়ের উৎস।

একমালিকি কারবারের বর্ণনা

Leave a comment