সরকারি ক্ষেত্র কি তার বৈশিষ্ট্য এবং তার প্রয়োজনীয়তা

সরকারি উদ্যোগ বা সরকারি ক্ষেত্রের কোনো সুনির্দিষ্ট ও সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়। কেউ কেউ সরকারের মালিকানা, নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনাধীন কারবারের সমষ্টিকে সরকারি বা রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্র বলেন। অনেকে আবার যে সমস্ত কারবার সরকারের সম্পুর্ন অথবা অধিকাংশ মালিকানায় গঠিত এবং সরকারের দ্বারাই পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাদের সরকারি কারবার বা রাষ্ট্রীয় কারবার বলেন।

“সরকারি ক্ষেত্র বলতে সরকারি মালিকানায় শিল্প, কৃষি আর্থিক এবং বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলির পরিচালনাকে বোঝায়।”

অধ্যাপক এ.এইচ. হ্যানসন বলেছেন,

সরকারি কারবার বলতে সেইসব কারবারি প্রতিষ্ঠানকে বোঝায় যাদের মালিক সরকার এবং যেগুলি সরকার কর্তৃক ব্যাবস্থাপিত ও পরিচালিত হয়।

সরকারি ক্ষেত্রের বৈশিষ্ট্য

১. সরকারি মালিকানা ও সামাজিক উদ্দেশ্য: রাষ্ট্রীয় কার্বার্গুলি সরকারি মালিকানায় ও সামাজিক কল্যানের জন্য গড়ে ওঠে। প্রতিটি সরকারেরই উদ্দেশ্য জনকল্যাণমূলক রাষ্ট গড়ে তোলা। মুনাফা অর্জন সরকারি কারবারের মুখ্য উদ্দেশ্য নয় এটি শুধু বেসরকারি ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন।

২. নিয়ন্ত্রণ ও পরিচলনা: সরকারি উদ্যোগ বা রাষ্ট্রীয় কারবার সম্পূর্ণভাবে সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়। ব্যবস্থাপকরা সকারের দ্বারা নিযুক্ত হন।

৩. মূলধন: এই কারবারের অধিকাংশ মূলধন সম্পুর্ন বা অধিকাংশই সরকার দ্বারা বিনিয়োগ করা হয়। সরকারের কাছে মূলধনের উত্সগুলির মধ্যে অন্যতম হল সরকারি ক্ষেত্রের উদবৃত্ত। সরকারি উদ্যোগগুলি যে পরিমান মনাফা পায় তার একটি বড় অংশ অন্যান্য শিল্পে মূলধন হিয়াসবে পুনরায় বিনিয়োগ করে।

৪. গণ-কৈফিয়ত: জনগনের কাছে রাষ্ট্রীয় কারবারের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হয়। সরকারি উদ্যোগগুলি পার্লামেন্টে ও সর্বসাধারণের কাছে তাদের কাজকর্মের বিষয়ে দায়বদ্ধ থাকে।

৫. ব্যবসায়িক প্রকৃতি: সরকারি উদ্যোগগুলির মধ্যে কিছু কিছু আছে যেগুলি কেবলমাত্র সমাজসেবামূলক কাজের অন্তরভুক্ত। যেমন – প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য। আবার কিছু কিছু কাজ আছে যেগুলি মূল্যর বিনিময়ে বিক্রয় করা হয়। তবে মুনাফা অর্জন যেহেতু সরকারের লক্ষ্য নয়, সে জন্য বিক্রয়মূল্য নির্ধারিত হয় লোকসান না হওয়ার দিকে লক্ষ রেখে।

পাইকারি ব্যবসা কি এবং তার বৈশিষ্ট্য

সরকারি কারবার স্থাপনের উদ্দেশ্য বা প্রয়োজনীয়তা

১. জনকল্যাণমূলক শিল্প: মুনাফা অর্জন নয়, জনকল্যাণই যেহেতু রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য তাই জনকল্যানমূলক শিল্পগুলি রাষ্ট্রীয় স্থাপিত হয়। জনগনের সেবার উদ্দেশ্য গঠিত শিল্পগুলির উন্নয়নের দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব সরকারের হাতেই থাকা উচিত। এই ধরনের শিল্পগুলি হল – ডাক ও তার, জল সরবরাহ, রেল পরিবহন, বিদ্দুত ও গ্যাস উত্পাদন এবং পরিবেশন ব্যবস্থা ইত্যাদি।

২. প্রতিরক্ষা শিল্প: দেশরক্ষা ও দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিরক্ষা শিল্পগুলি নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব রাষ্ট্রের হাতেই থাকা উচিত। প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত শিল্প্গিলো বেসরকারি মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণে থাকলে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। তাই প্রতিরক্ষা মূলক দায়িত্ব রাষ্ট্রের হাতেই থাকা বাঞ্চনীয়।

৩. ভারী ও মূল শিল্প: দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য ভারী ও মূল শিল্পের একান্ত জরুরি। এই সমস্ত কারবারে মুনাফার তুলনায় মূলধন বেশি নিয়োগ করতে হয়। তাই এই সমস্ত শিল্পস্থাপনে খুব বেশি বেসরকারি আগ্রহ দেখা যায় না। যার ফলে এই ধরনের শিল্পগুলি বর্তমানে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে গঠিত ও পরিচালিত। ১০২

আরও পড়ুন,

সবুজ বিপ্লবের ফলাফল

সমবায় সমিতি কি এবং তার বৈশিষ্ট্য

Leave a comment