অনুন্নত অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য

সমস্ত অনুন্নত দেশ একরকম নয়। তবে অনুন্নত দেশগুলির কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। সেই সাধারণ বৈশিস্ত্যগুলিকে আলোচনা করা হল।

১. মাথাপিছু আয়ের স্বল্পতা

মাথাপিছু আয় দিয়েই আমরা উন্নত এবং অনুন্নত দেশের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করি। যে সমস্ত দেশের মাথাপিছু আয় কম সেই সমস্ত দেশকেই আমরা অনুন্নত দেশ বলে থাকি। কাজেই অনুন্নত দেশগুলির প্রথম এবং প্রধান বৈশিষ্ট্য হল মাথাপিছু আয়ের স্বল্পতা। যে সমস্ত দেশের মাথাপিছু আয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং পশ্চিম ইউরোপ দেশগুলির মাথাপিছু আয়ের তুলনায় কম সেই সমস্ত দেশকেই অনুন্নত দেশ বলা হয়।

বিশ্ব ব্যাঙ্কের হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীর দেশগুলিকে তিনভাগে ভাগ করা হয় (ক) স্বল্প আয়বিশিস্ট দেশ (খ) মধ্য আয়বিশিস্ট দেশ এবং (গ) উচ্চ আয়বিশিস্ট দেশ। ১৯৮০ সালের হিসাব অনুযায়ী, যেসব দেশের মাথাপিছু জিত্য উৎপাদন ৪০০ মার্কিন ডলার বা তার কম সেইসব দেশকে স্বল্প আয় বিশিষ্ট দেশ বলা হয়। যেসব দেশের মাথাপিছু আয় ৪০০ ডলারের বেশি কিন্তু ৪৫০০ ডলারের কম তাদের মধ্য আয় বিশিষ্ট দেশ বলা হয়। আর যেসব দেশের মাথাপিছু আয় ৪৫০০ ডলারের বেশি সেইসব দেশকে উচ্চ আয় বিশিষ্ট দেশ বলা হয়।

২. প্রাথমিক ক্ষেত্রের প্রাধান্য

সমস্ত অনুন্নত দেশেই লক্ষ করা যায় যে, জাতীয় আয়ের একটি বিরাট অংশ প্রাথমিক ক্ষেত্র থেকে উদ্ভূত হচ্ছে। মোট জনসংখ্যারও একটি বিরাট অংশ প্রাথমিক ক্ষেত্রে নিযুক্ত থাকে। প্রাথমিক ক্ষেত্র বলতে বোঝায় কৃষিকার্য, মত্স্য চাষ, পশুপালন, বনজ সম্পদ, ইত্যাদি জীবিকা যেখানে প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রয়েছে। অধিকাংশ অনুন্নত দেশেই দেখা যায় যে, দেশের জনসাধারণের ৭০% থেকে ৮০% পর্যন্ত কৃষি ও কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক ক্ষেত্রে নিযুক্ত থাকে। তাছাড়া দেশের মোট জাতীয় আয়েরও ৭০% থেকে ৮০% এই প্রাথমিক ক্ষেত্র থেকেই উদ্ভূত হয়। ভারতের অর্থনীতিতেও প্রাথমিক খেতের এইরূপ প্রাধান্য লক্ষ করা যায়।

৩. মূলধনের স্বল্পতা

অনুন্নত দেশগুলির তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হল মূলধনের স্বল্পতা। মূলধনের পরিমান কম থাকার জন্যই অনুন্নত দেশগুলিতে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় না এবং প্রাকৃতিক সম্পদও ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। উন্নত দেশগুলিতে মাথাপিছু যে পরিমান বিদ্দুতশক্তি ও ইস্পাত ব্যবহৃত হয় সে তুলনায় অনুন্নত দেশগুলিতে মাথাপিছু বিদ্দুত্শক্তি ও ইস্পাতের ব্যবহার খুবই কম। মূলধনের স্বল্পতার কারণ হল কম সঞ্চয় এবং কম সন্হ্কয়ের কারণ আয়ের স্বল্পতা।

৪. অধিক মাত্রায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি

অনুন্নত দেশগুলির ওপর একটি বৈশিষ্ট্য হল এদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অত্যন্ত বেশি। অনুন্নত দেশগুলিতে লক্ষ করা যায় যে, এগুলিতে জন্মহার খুব বেশি কিন্তু মৃত্যুহার হ্রাস পাওয়ার জন্য জনসংখ্যা দ্রুত হারে বাড়ছে। তার ফলে দেশগুলিতে জনাধিক্যর সমস্যা দেখা দেয়। জনসংখ্যা যে হারে বারে সে তুলনায় অকৃষিক্ষেত্রের বিকাশ না ঘটার জন্য বাড়তি জনসংখ্যা কৃষিতে ভিড় করে। এভাবে কৃষিতে জনাধিক্য এবং প্রচ্ছন্ন বেকারী দেখা দেয়। কৃষিতে অতিরিক্ত জনসংখ্যা থাকার জন্য কৃষিতে শ্রমিকের উৎপাদন ক্ষমতা কম থাকে।

৫. জীবনযাত্রার নিম্নতম মান

এই ধরনের দেশগুলিতে মাথাপিছু আয় খুব কম। জনসংখ্যা দ্রুতহারে বৃদ্ধি পায়। সেজন্য এই দেশগুলিতে গন-দারিদ্র্য দেখা দেয়। দেশের জনসাধারণের একটি বিরাট অংশ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। ব্যাপক অশিক্ষা, দারিদ্র, অপুষ্টি, অস্বাশ্ত্য ইত্যাদি সমস্ত অনুন্নত দেশের বৈশিষ্ট্য। দারিদ্র্য , অশিক্ষা এবং অপুষ্টির জন্য জনসাধারণের গড় আয় অপেক্ষাকৃত কম থাকে। শিশুমৃত্যুর হার বেশি হয়। জনসাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম থাকে।

৬. অনুন্নত উৎপাদন পদ্ধতি

অনুন্নত দেশগুলিতে প্রধান জীবিকা কৃষি। মোট জনসংখ্যার অধিকাংশই কৃষির উপর নির্ভরশীল। তবে কৃষির উৎপাদন কৌশল খুবই প্রাচীন। কাঠের লাঙ্গল এবং বলদের সাহায্যই কৃষিকার্য করা হয়। এই সমস্ত দেশে খুব বেশি শিল্প বিকাশ লাভ করেনি। যে সমস্ত শিল্প বিকাশ লাভ করেছে সেগুলিতেও উৎপাদন পদ্ধতি খুবই প্রাচীন ধরনের।

৭. প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার

অনুন্নত দেশগুলির ওপর একটি বৈশিষ্ট্য হল প্রাকৃতিক সম্পদ সম্পুর্নরুপে ব্যবহার না করা। সকল অনুন্নত দেশেই যে প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব রয়েছে একথা ঠিক না। অনেক অনুন্নত দেশই রয়েছে যেগুলি প্রাকৃতিক সম্পদে পূর্ণ কিন্তু অন্যান্য উপকরণের মধ্যে মূলধনের অভাব, দক্ষ শ্রমিকের অভাব লক্ষ্য করা যায়।

সবুজ বিপ্লবের ফলাফল

Leave a comment