ব্যাঙ্কের প্রকারভেদ এবং তার বর্ণনা

ব্যাঙ্ক বলতে আমরা এই রকম প্রতিষ্ঠানকে বুঝি যে প্রতিষ্ঠানের কাজ জনসাধরণের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করা। এই আমানত অর্থ চাহিদামাত্র ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকারে গ্রহণ করা হয় এবং ব্যাঙ্ক এই অর্থ ঋণ দেওয়ার কাজে ব্যবহার করে। কোনো একটি দেশে ব্যাঙ্কিং কাজকর্ম করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠান দেখা যায়। যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক, বানিজ্যিক ব্যাঙ্ক, শিল্প ব্যাঙ্ক, কৃষি ব্যাঙ্ক, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় ব্যাঙ্ক ইত্যাদি।

১. কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক

কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক দেশের শীর্ষস্থানের অবস্থিত নেতৃস্থানীয় ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান। প্রত্যেক দেশের ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার শীর্ষস্থানে একটি কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক থাকে। দেশে টাকাকড়ি প্রচলন এবং নিয়ন্ত্রনের পুরোপুরি দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের হাতে থাকে। এছাড়া অন্যান্য ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণ করা এবং দেশের আর্থিক পরিস্থিতি অনুযায়ী তাদের যথাযোগ্য পরিচালনা করা কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের কাজ। ভারতে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের নাম রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া।

২. বানিজ্যিক ব্যাঙ্ক

বানিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির প্রধান কাজ স্বল্পমেয়াদী ঋণ দান করা। এগুলি জনসাধরণের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে এবং আমানত থেকে সংগৃহত অর্থ স্বল্পকালের জন্য ঋণ দেয়। এছাড়া বানিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি জনসাধারণের প্রতিনিধি হিসাবেও নানা কাজ করে থাকে। আজকাল বানিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি অবশ্য কিছু কিছু দীর্ঘমেয়াদী ঋণও দিচ্ছে। বানিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য যে এগুলি প্রধানত ব্যবসাবাণিজ্যর ক্ষেত্রেই ঋণ দেয়।

৩. বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় ব্যাঙ্ক

বৈদেশিক মুদ্রা মিনিময় ব্যাঙ্কগুলি বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় বিক্রয়ের কাজ করে থাকে। বৈদেশিক বানিজ্য লিপ্ত ব্যবসায়ীরা এই ধরনের ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ পেতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রা এই সমস্ত ব্যাঙ্কের কাছে বিক্রি করা হয় অথবা এই সমস্ত ব্যাঙ্কের কাছ থেকে কেনা হয়। আমদানি রপ্তানির কাজকর্ম করার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হয় সেই অর্থ এই ব্যাঙ্কগুলির কাছ থেকে ঋণ আকারে পাওয়া যায়। ভারতের Exim Bank একটি বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় ব্যাঙ্কের উদাহরণ।

৪. শিল্প ব্যাঙ্ক

শিল্প ব্যাঙ্কগিলি দেশের শিল্পকে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দিয়ে সাহায্য করে। এছাড়া এগুলি শিল্প প্রতিষ্ঠানের শেয়ার, ডিবেঞ্চার ইত্যাদি কিনে থাকে। ভারতে শিল্প অর্থ কর্পোরেশন, শিল্পায়ন ব্যাঙ্ক ইত্যাদি শিল্প ব্যাঙ্কের উদাহরণ।

৫. কৃষি ব্যাঙ্ক

কৃষি ব্যাঙ্ক কৃষিক্ষেত্রে ঋণ দিয়ে থাকে। কৃষকদের জমির উন্নয়ন এবং কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার জন্য এই ব্যাঙ্কগুলি দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেয়। আবার চাষের খরচ মেটানোর জন্য এগুলি স্বল্পমেয়াদী ঋণও দিয়েথাকে। ভারতে কৃষিক্ষেত্রে ঋণের যোগান দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ ব্যাঙ্ক “কৃষি ও গ্রামীন উন্নয়নের জাতীয় ব্যাঙ্ক (NABARD)। এছাড়া ভূমি উন্নয়ন ব্যাঙ্ক এবং আঞ্চলিক গ্রামীন ব্যাঙ্কগুলিও কৃষি উন্নয়নের জন্য ঋণ প্রদান করে থাকে।

৬. সমবায় ব্যাঙ্ক

এইবাঁকগুলি সমবায়ের ভিত্তিতে গঠিত হয় এবং সমবায়ের সমিতির সদস্যরা এই ব্যাঙ্কগুলির কাছ থেকে ঋণ পেয়ে থাক।

অন্যান্য ব্যাঙ্কের সাথে বানিজ্যিক ব্যাঙ্কের তফাৎ এই যে অন্য ব্যাঙ্কগুলি অর্থনীতির বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ঋণ দেয়। যেমন কৃষিব্যাঙ্কের কাজ কৃষিক্ষেত্রে ঋণের যোগান দেওয়া, শিল্প ব্যাঙ্কের কাজ শিল্পক্ষেত্রে ঋণের যোগান দেওয়া সমবায় ব্যাঙ্কের কাজ সমবায় সমিতিগুলিকে ঋণের যোগান দেওয়া ইত্যাদি। তাছাড়া বানিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি ছাড়া অন্যান্য ব্যাঙ্ক প্রধানত দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দিয়ে থাকে।

কোনো দেশের অর্থনীতিতে বানিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির গুরুত্ব খুব বেশি কারণ এই ব্যাঙ্কের চলতি আমানতগুলি বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয়। অন্য ব্যাঙ্কগুলির আমানতের এই গুন থাকে না। সেজন্য বানিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির আমানতকে আমরা অর্থের যোগানের মধ্যে ধরে থাকি। অন্য ব্যাঙ্কের আমানতকে অর্থের যোগানের মধ্যে ধরা হয় না।

পাইকারি ব্যবসা কি এবং তার বৈশিষ্ট্য

Leave a comment