সবুজ বিপ্লবের ফলাফল

নতুন কার্যক্রমে গ্রহণ করার ফলে কৃষি উৎপাদন এত দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে যে অনেকে একে বিপ্লাবত্ম্ক আখ্যা দিয়েছেন। উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনাকেই সবুজ বিপ্লব বলে। সবুজ বিপ্লবের ফলাফল নিয়ে এখন আমরা আলোচনা করব।

১. উৎপাদন অনেকগুণ বেড়েছে:

এই প্রযুক্তি গ্রহণ করার ফলে মোট উৎপাদন অনেকগুণ বেড়েছে। তবে নতুন প্রযুক্তির সুফল গম উত্পাদনের ক্ষেত্রে যতটা লক্ষ করা গেছে ধান উৎপাদনর ক্ষেত্রে ততটা লক্ষ করা যায়নি। তাছাড়া ডাল, তৈলবীজ, জোয়ার, বাজরা প্রভৃতি শস্য ক্ষেত্রেও উৎপাদনশীলতা তত বাড়েনি। আখ, তুলো, পাটজাতীয় শস্যর খেতের একই কথা বলে যেতে পারে। উৎপাদন কেন আশানুরূপ বাড়েনি তার কারণ হিসাবে বলা যেতে পারে অনেক ক্ষেত্রে চাষীরা বিভিন্ন উপাদান নির্দিষ্ট অনুপাতে ব্যবহার করতে পারেনি।

যেমন জলের অভাবে সার প্রয়োগ করা যায়নি বা বাজারে সারের অভাব থাকায় পর্যাপ্ত সার প্রয়োগ করা যায়নি। তাছাড়া ভারতের সব রাজ্য এই প্রযুক্তি সমানভাবে প্রযোজ্য হয়নি। তবে এটা ঠিক খাদ্য উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্দি পেয়েছে। দেশ এখন খাদ্যশস্য স্বনির্ভর হতে পেরেছে। বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করা বন্ধ হয়েছে।

২. কর্মসংস্থানের উপর প্রভাব অনিশ্চিত:

নতুন প্রযুক্তির ফলে কর্মসংস্থান বেড়েছে না কমেছে তা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। একদিকে, সারা বছরে একাধিক বার ফসল ফলানোর জন্য শ্রমের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। উচ্চ ফলনশীল বীজের ক্ষেত্রে আগাছাগুলি একাধিক বার নিড়ানি দিতে হয় কারণ আগাছা সার শুষে নেয়। একাধিক বার নিড়ানি দেওয়ার জন্য বেশি শ্রমের দরকার।

আবার অন্যদিকে নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। ফলে কর্মসংস্থান কিছুটা কমেও যাচ্ছে। তার ফলে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করার জন্য মোট কর্মসংস্থান বাড়বে না কমবে তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।

৩. বড় চাষি বেশি সুফল ভোগ করেছে:

নতুন প্রযুক্তির সুফল বড় চাষি বেশি ভোগ করেছে। নতুন প্রযুক্তি ব্যয়সাধ্য বলে ছোট চাষি নতুন প্রযুক্তির সুফল গ্রহণ করতে পারছে না। এর ফলে নতুন প্রযুক্তি প্রবর্তিত হওয়ায় গ্রামাঞ্চলে আয় বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ছোট চাষি এবং ভূমিহীন কৃষক নতুন প্রযুক্তির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন প্রযুক্তি সমান ভাবে প্রচলিত না হওয়ায় দেশের মধ্যে আঞ্চলিক বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৪. ধনতান্ত্রিক কৃষি ব্যবস্থার প্রসার হয়েছে:

নতুন প্রযুক্তির ফলে ভারতে ধনতান্ত্রিক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। কলকারখানায় উত্পাদনের ভঙ্গিতে কৃষিতে মূলধন নিয়োগ করে মজুর ভাড়া করে মুনাফা বৃদ্ধি করার নানা পদ্ধতি প্রযুক্ত হচ্ছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, পাঞ্জাবে নতুন এক ভদ্রলোক কৃষক শ্রেনীর উদ্ভব ঘটেছে তাদের অধিকাংশই ছিলেন সরকারী কর্মচারী, সেনাবাহিনীর সদস্য বা শহরের ধনী ব্যবসায়ী। এই শ্রেণী কৃষিকে শিল্প হিসাবে গ্রহণ করে কৃষিতে বিনয়োগ করেছে।

বেশি দাম দিয়ে ছোট ছোট কৃষকদের কাছ থেকে জমি কিনে নিয়ে এরা বড় বড় খামার গড়ে তুলেছে। আবার বড় চাষিও ছোট চাষিকে ইজারা দেওয়া জমি ফিরিয়ে নিয়ে এরা চাষ আবাদ করছে। ফলে ছোট চাষিরা ভূমিহীন কৃষি শ্রমিকে পরিনত হচ্ছে।

৫. নতুন প্রযুক্তি ও দারিদ্র্য

কৃষির নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে দারিদ্র্য বেড়েছে না কমেছে সে সম্পর্কে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে। কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ মনে করেন যে, নতুন প্রযুক্তি গ্রামাঞ্চলে আয়বৈষম্য বৃদ্ধি করে এবং দারিদ্র্যর প্রকোপ বাড়ায়। আবার কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ মনে করেন যে, নতুন প্রযুক্তি একদিকে শ্রমের চাহিদা বাড়ায় অন্যদিকে খাদ্যশস্যর দাম কমে। যেহেতু দরিদ্রদের প্রধান ভোগ্য দ্রব্য হল খাদ্যশস্য আর যেহেতু দরিদ্রতা শ্রমশক্তি বিক্রি করে আয় করে তাই নতুন প্রযুক্তি দারিদ্র্য কমে, দারিদ্র্যদের অনুকুল হয়।

৬. আঞ্চলিক বৈষম্য বৃদ্ধি:

সবুজ বিপ্লবের ফলে রাজ্যগত ও অঞ্চলগত বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সবুজ বিপ্লবের প্রথম পর্যায়ে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তর প্রদেশ প্রভৃতি গম উত্পাদক এলাকাগুলি অধিক উন্নত হয় কারণ নতুন প্রযুক্তি প্রথমে গমের ক্ষেত্রে বেশি কার্যকারী হয়।

অনেকে অবশ্য নতুন প্রযুক্তির এই ফলকে বিপ্লবাত্মক আখ্যা দিতে নারাজ। তাঁদের মতে, এই সবুজ বিপ্লব সর্বাত্মক বিপ্লব নয় কোরন এর প্রভাব সকল রাজ্য সমানভাবে পরেনি। আবার সকল কৃষি পণ্যর ক্ষেত্রেও এর প্রভাব সমান নয়। কাজেই একে বিপ্লব বলা যায় না।

মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীন কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইন

অনুন্নত অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য

Leave a comment