বেসরকারী ক্ষেত্র কি তার বৈশিষ্ট্য

আকৃতি বা আয়তনের দিক থেকে কারবারী প্রতিষ্ঠানের তিন ধরনের রূপ দেখতে পাওয়া যায়, যেমন- ক্ষুদ্র, মাঝারি এবং বৃহৎ। আবার মালিকানার দিক থেকেও কারবারী প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন রূপ দেখতে পাওয়া যায়। মালিকানাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানকে দুভাগে ভাগ করা যায় – বেসরকারি ক্ষেত্র ও সরকারি ক্ষেত্র

ব্যক্তিগত মালিকানা ও উদ্যোগের ভিত্তিতে যখন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা ব্যবসাবানিজ্য গড়ে ওঠে, তখন তাকে বেসরকারী ক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠান বলে। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলিকে একসঙ্গে বেসরকারী ক্ষেত্র বলে। একমালিকি, যৌথ হিন্দু পারিবারিক, অংশীদারী, যৌথ মূলধনী কারবার ও সমবায়সমিতি বেসরকারী ক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠান।

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় বেসরকারী কারবারী ক্ষেত্রেই প্রধান। সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় বেসরকারি ক্ষেত্রের কোনো স্থান নেই। মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সরকারী উদ্যোগের সঙ্গে বেসরকারি উদ্যোগ পাশাপশি অবস্থান করে। কিন্তু সেক্ষেত্রে বেসরকারি ক্ষেত্র সরকারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ভারতের মতো মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্র পাশাপাশি অবস্থান করে।

বেসরকারি ক্ষেত্রের বৈশিষ্ট্য

১. মালিকানা: এক বা একাধিক ব্যক্তির মালিকানার সম্মিলিত প্রচেষ্টা একত্রিত হয়। এক ব্যক্তির মালিকানায় মালিক কারবারের সমস্ত কিছু স্বত্বের অধিকারী হয় থেকেন, মালিকই কারবারের নীতিনির্ধারণ এবং তা কার্যকরী করে থাকেন। কারবারের উপর সম্পুর্ন কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা মালিকের নিজের উপরেই থাকে। একাধিক ব্যক্তির মালিকানায় মালিকরা যৌথভাবে এবং সমবেতভাবে কারবারের নীতিনির্ধারণ করেন।

২. উদ্যোক্তা: উদ্যোক্তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে গঠিত প্রতিষ্ঠানগুলি সমষ্টিগতভাবে বেসরকারি ক্ষেত্র গড়ে তোলে। বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত উদ্যোগে গঠিত হয়। সমসত উদ্যোগ সম্মিলিত হয়ে বেসরকারি ক্ষেত্র গড়ে ওঠে। ১০১

৩. মূলধন: ব্যক্তিগতভাবে মূলধন নিয়োজিত থাকে। একক মালিকানায় কারবারের মূলধন মালিক নিজেই সরবরাহ করেন। প্রয়োজন হলে তিনি অপরের কাছ থেকে ঋণগ্রহণ করতে পারেন। আর কারবারে একাধিক মালিক থাকলে সবাই মিলিতভাবে কারবারে মূলধন সরবরাহ করেন। তবে মূলধনের পরিমান বা অংশ সমান নাও হতে পারে। আবার কেউ মূলধন বিনিয়োগ না করেও অংশীদার হতে পারেন।

আরও পড়ুন,

পাইকারি ব্যবসা কি এবং তার বৈশিষ্ট্য

বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং কি এবং তার সুবিধা অসুবিধা

৪. উদ্দেশ্য: প্রাথমিক উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন হলেও জনসেবামূলক কাজ করা বেসরকারী ক্ষেত্রের আর-একটি মুখ্য উদ্দেশ্য। তবে ব্যক্তিগত কারবারের প্রধান উদ্দেশ্য হল মুনাফা অর্জন করা। মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হয় ব্যক্তিগত শর্তপূরণের জন্য, ব্যক্তিগত স্বার্থ বজায় রাখাই হল এর প্রধান উদ্দেশ্য।

৫. নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা: এই ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার ভার এক ব্যক্তি বা ব্যাক্তিগষ্ঠির হাতে অর্পণ করা হয়। একমালিকি কারবারে মালিকের নিজের উপরই নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকে। আর অংশীদারি কারবারে সব সদস্যই মিলিতভাবে কারবারে মালিক। কারবার নিয়ন্ত্রনের ব্যাপারে প্রত্যেক অংশীদারীই কারবারে অংশগ্রহণ করেন।

৬. বৈষম্য: বেসরকারি ক্ষেত্রে ধনবৈষম্য ও সম্পদবৈষম্য তীব্র করে এবং শ্রেনীভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তলে। ধনসম্পদ কয়েকজন মুষ্টিমেয় পুঁজিপতির হাতে কেন্দ্রীভূত হয়। ব্যক্তিগত স্বার্থ বজায় রকি আসল কাজ।

৭. একচেটিয়া মনোভাব: বেসরকারি ক্ষেত্রে মালিকের একচেটিয়া মনোভাবের দরুন শ্রমিকরা অনেক সময় নায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয় ভোগকারীদের বেশি দামে পণ্য ক্রয় করতে হয়। মালিক সুদক্খ হলে কারবার যেমন সাফল্যমন্ডিত হয়, তেমনই মালিকের অযোগ্যতা ও খামখেয়ালীপনার জন্য এরূপ কারবার সহজেই অবনতির দিকে যেতে পারে। অর্থাৎ, একচেটিয়া মনোভাবের দরুন কারবার যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

ব্যাঙ্কের প্রকারভেদ এবং তার বর্ণনা

অনুন্নত অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য

Leave a comment